যারা নতুন করে স্টাডি ভিসায় সাইপ্রাসের ভিসা পেয়েছেন তাদের জন্য
আপকামিং ডে তে একটা হিউজ এমাউন্টের স্টুডেন্ট সাইপ্রাসে আসছে এটা সকলেরই জানা। এখানে নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশী স্টুডেন্ট দের সংখ্যাই বেশি। এই পরিস্থিতিতে সারভাইব করাটা চ্যালেঞ্জিং তবে অসম্ভব নয়।
যদি আপনার জব, থাকা, খাওয়া, পড়াশোনা, ফ্যামিলির সাথে যোগাযোগ ইত্যাদি বিষয় গুলো ঠিক রাখতে চেষ্টা করেন তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে আপনার জন্য সহজ হবে।
জব- আমি অবশ্যই পড়াশোনাকে প্রাধান্য দেই তবে তার থেকে বেশি প্রাধান্য দেই জব কে! কারণ আপনার ইনকাম সোর্স স্বাভাবিক থাকলে আপনার টিউশন ফি সহ ইত্যাদি খরচাদি বহন করতে সহজ হবে এবং ডিপ্রেশনে পড়বেন না।
জব খুজার ক্ষেত্রে আমরা একটা বড় ভুল করি, সেটা হচ্ছে রাস্তায় কোনো বাঙালি পেলেই তার কাছে জব চাই। এটা হচ্ছে সব থেকে ভুল কাজ। তবে বাঙালিদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেন বা অপশনাল হিসেবে জবের কথা বলতে পারেন সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু ভাই আমি আপনাকে বলে রাখি যত বড় পীর সাবই হোক না কেনো কেউই আপনাকে জব দিয়ে হেল্প করবে না, আমি নিজেই এর ভুক্তভোগী। আমি আগে যেই বাসায় থেকেছি, সেখানে এমনো ছেলে ছিলো যার কাছে অহরহ ছুটা কাজ ছিলো কিন্তু দিবে দিবে বলে আমাকে একদিনের জন্যও কাজ দেয় নাই। অথচ আমি বাংলাদেশ থেকে আমার টাকা দিয়ে ওর জন্য ইলেকট্রনিক জিনিস নিয়ে এসেছিলাম।
Looking for a Jon in Cyprus
জব খুজবেন কিভাবে-
আপনি নিজে স্ব-শরীরে জব খুজবেন। আপনি যে বাসায় থাকেন, ১ম দিন সে বাসার উত্তর দিকের ৩/৪ কিলোমিটার রাস্তা হাটবেন এবং পথিমধ্যে যত রেস্টুরেন্ট, বার, সুপারশপ, অফিস, কার পাম্প যাই থাকবে সকলের কাছে আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতার কথা বলবেন এবং তাকে অল্প কথায় কনভিন্স করার চেষ্টা করবেন এবং নাম্বার দিয়ে আসবেন। একই ভাবে ২য় দিন আপনার বাসার দক্ষিণ দিকে যাবেন। ৩য় দিন পশ্চিম এবং ৪র্থ দিন পূর্ব দিকে ৩/৪ কিলোমিটার হাটবেন এবং একই নিয়মে জব খুজবেন।
আর জব খুজতে অবশ্যই একা যাবেন, সাথে কাউকে নিবেন না। রেস্টুরেন্ট গুলোতে দুপুর ১২ টা এবং সন্ধ্যা ৬টার দিকে কথা বলতে যাবেন। রেস্টুরেন্ট গুলোতে মালিক, শেফ, ম্যানেজার ছাড়া অন্য কারো সাথে কথা বলবেন না, তাহলে জব ভ্যাকেন্সি থাকলেও সেটা হারাবেন। রেস্টুরেন্টের মালিক অথবা ম্যানেজার থাকে ক্যাশে বসা এবং পিছনের গেট অথবা কিচেনে থাকে শেফ !
থাকা- একটা ভালো থাকার পরিবেশ নিশ্চিত করাটা হচ্ছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আপনার রুম মেট অথবা বাসার স্বত্বাধিকারী যদি আপনার মেন্টালিটির সাথে না মিলে তাহলে ট্রমাটাইজড হবেন। এখানে বর্তমানে থাকার জায়গার সংকট, তবে চেষ্টা করলে খুঁজে পাবেন।
মেয়েদের ক্ষেত্রে আমি দেখি তারা লিমাসোলের দিকে মুভ করতে পছন্দ করে কারণে সেখানে বাঙালি মেয়েদের ছোট ছোট গ্রুপ আছে। শুনেছি নিকোশিয়া থেকে সেখানে টুকটাক ভালো জব পাওয়া যায়, তবে যে যেখানেই জান কিন্তু ভালোভাবে সবকিছু যাচাই বাছাই করে নিবেন।
চেষ্টা করবেন রুমমেট বা বাসার মানুষ দের সাথে মিলে মিশে চলতে, তাদের সাথে চলাফেরা লেনদেন ইত্যাদি করার আগে তাকে বুঝে নিবেন। আর কারো সাথে ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলেও অবশ্যই টাকা ধার ইত্যাদি টাকার লেনদেন করার থেকে বিরত থাকবেন। দ্রুত ব্যাংক একাউন্ট খোলার চেষ্টা করবেন এবং মানিব্যাগে সর্বোচ্চ ১০/২০ ইউরো রেখে বাকিটা কার্ডে রেখে দিবেন, কারণ বেশি টাকা রাখলে হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কেনাকাটা ও যাবতীয় কাজ সব কিছুই কার্ড দিয়েই করবেন।
কোনো কারণে যদি বাসা চেঞ্জ করতে চান তাহলে নতুন বাসা ফিক্সড না হওয়া পর্যন্ত বাসার স্বত্বাধিকারী বা রুমমেট কাউকে কিছুই বলবেন না !
খাওয়া - আমরা আগে ৬/৭ জন মিলে খেয়েছি। সপ্তাহে ১ জনের একেকদিন রান্নার ডেট থাকতো। এর যেমন ভালো দিক আছে আবার খারাপ দিকও আছে ইত্যাদি! যদি একা খান তাহলে ২/৩ দিন পর পর তরকারি রান্না করে বক্সে সংরক্ষণ করবেন। এবং প্রতিদিন ভাত রান্না করবেন। আর সকলের সাথে খেতে চাইলে ভালোভাবে সবকিছু বুঝে নিবেন।
ব্যাসিক রান্না গুলো শিখে আসবেন এবং প্রয়োজনীয় ১টা ফ্রাইংপ্যান, মিলিয়ে কয়েকটি চামচ, পাতিল, প্লেট, স্টিলের গ্লাস, নাইফ, প্রয়োজনীয় মশলা নিয়ে আসবেন। জামা কাপড়, মোবাইল, ভালো মানের হেডফোন, ভাল পাওয়ার ব্যাংক এগুল অবশ্যই নিয়ে আসবেন কারণ এগুলো এখানে খুব এক্সপেন্সিভ।
প্রয়োজনীয় জিনিস বা ডকুমেন্টস- আসার সময় সব কাগজের সাথে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, ব্যাংক সলভেন্সি অবশ্যই নিয়ে আসবেন। বাসা নেওয়ার পূর্বে হাউজ এগ্রিমেন্ট পেপার নিয়ে কথা বলে নিবেন এটা মোস্ট ইমপর্ট্যান্ট। দ্রুত ব্যাংক এপোয়েনমেন্ট নিয়ে ব্যাংক খুলবেন। যারা ভবিষ্যতে ডেলিভারি করতে আগ্রহী তারা হাউজ এগ্রিমেন্ট ম্যানেজ করেই উক্ত সিম কোম্পানির অফিসে গিয়ে সিম রেজিষ্ট্রেশন এবং পোস্ট পেইড সিস্টেম করবেন। দ্রুত মাইগ্রেশানের ডেট নিবেন ইত্যাদি।
ভার্সিটিতে প্রথম দিনই আইডি কার্ড আবেদন করবেন এবং আইডি কার্ড দিয়ে স্টুডেন্ট বাস কার্ড বানিয়ে নিবেন তাহলে ভাড়া খরচ কমবে।
স্টুডেন্ট বাস কার্ড দিয়ে, পুরো নিকোশিয়াতে মান্থলি ২৫ ইউরো প্যাকেজ আছে এবং ৩০ দিন যত খুশি তত যাতায়াত করতে পারবেন। অথবা স্টুডেন্ট বাস কার্ড স্পেসিফিক এমাউন্ট রিচার্জে প্রতি যাতায়াত করতে পারবেন ৯০ সেন্ট করে।
অনেকে এসে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়, এটা ভালো কাজ নয়, পরবর্তীতে সমস্যায় পরবেন। চেষ্টা করবেন ভার্সিটির ক্লাস গুলোতে উপস্থিত থাকতে এবং বাসায় পড়াশুনা করতে। প্রতিদিন সকল কাজ শেষে বাসায় পরিবারের সাথে কথা বলুন এবং যথেষ্ট সময় দিবেন, দিনশেষে হ্যাপি থাকবেন।
লাস্ট কথা এটা আপনার দেশ না, সুতরাং চলাফেরা, কথাবার্তা, লেনদেন, নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ইত্যাদি করার পূর্বে একটু চিন্তা ও পরামর্শ করে নিবেন। বিশেষ করে আপুরা কারো সাথে যোগাযোগ, কথা বার্তা করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করবেন। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কিছুই করতে পারবেন না তাই প্রতিনিয়ত নামাজ পরে পরে আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন এবং আগাবেন.....
আবু হুরায়রা তানজিম
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ফিলিপস বিশ্ববিদ্যালয়, নিকোশিয়া।
Post a Comment